পাখির রাজ্য বাইক্কা বিল (শ্রীমঙ্গল, সিলেট)

পাখির রাজ্য বাইক্কা বিল (শ্রীমঙ্গল, সিলেট)

Jan 10·3 min read

ভূমিকা: হাইল হাওড়ের জীব বৈচিত্র্য (মূলত পাখি ও মাছ) রক্ষা করাই হল বাইক্কা বিল অভয়ারণ্যর মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া এখানে আগত একজন পর্যটক যেন এই স্থানটি উপভোগ করার পাশাপাশি প্রকৃতিকে কাছে থেকে বুঝতে পারেন এবং জলাভুমি সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝতে পারেন সেটিও এই অভয়ারণ্যর আরেকটি উদ্দেশ্য।

বর্ণনা: প্রায় ১০০ হেক্টর জলাভুমির ওপর অবস্থিত এই অভয়ারণ্যটি কোন কোন মৌসুমে ৩০০০ হেক্টর থেকে ১২০০০ হেক্টর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বাইক্কা বিলে রয়েছে মূলত শাপলা ফুল এবং প্রায় পাঁচ থেকে আট বছর পূর্বে রোপণ করা জলজ গাছ। এই বিলে প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছ বাস করে। তবে এখানে শীতকালে আগত অতিথি পাখিদের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে।

প্রাণীসম্পদ: এ পর্যন্ত এই অভয়ারণ্যতে প্রায় ১৪১ প্রজাতির পাখিদের দেখা মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৯ প্রজাতির ফিশ ঈগল উইন্টার, প্রায় ৪৫০০ ফুল্ভাস হুইসটলিং হাঁস সহ শীতকালে আগত হাঁসদের বিশাল বহর। এছাড়া এখানে নিয়মিত গ্রেট স্পটেড ঈগল সহ বিভিন্ন ধরনের পাখিদের দেখা মেলে।

যাওয়ার উপায়: দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে পৌছাবেন সেটা বাসেও হতে পারে কিংবা ট্রেনে। আপনি যদি মৌলভীবাজার থেকে আসেন তাহলে মৌলভিবাজার-শ্রীমঙ্গল মহাসড়কে ভৈরবগঞ্জ বাজারের প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে বাইক্কাবিল পৌঁছানোর নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড আপনার ডান দিকে পরবে। আর ঢাকা থেকে আসলে বায়ে পরবে।
শ্রীমঙ্গল শহরের স্টেশন রোড থেকে সিএনজি অটোরিকশা আপডাউন ভাড়া করে এই বিলে আসতে পারেন খরচ পরবে ৬০০-৮০০ টাকা। তবে ব্যাক্তিগত গাড়িতে আসলে ফোর হুইল ড্রাইভ জীপ অথবা এই জাতীয় ভারি গাড়িতে আসাই ভাল কারন এখানকার রাস্তা খুব একটা ভালো নয়। মৌলভীবাজারের পথ ধরে প্রায় ৬ কিলোমিটার অগ্রসর হলে এই বিলে পৌঁছানোর নির্দেশিকা সম্বলিত সাইন বোর্ডটি আপনার বাম পাশে পরবে। এছাড়াও দিক নির্দেশনার জন্য আপনি স্থানীয়দেরও সাহায্য নিতে পারেন। আর গুগল ম্যাপ তো আছেই।

উপভোগ্য বিষয়: ১| বিলে পৌছানোর রাস্তাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। আপনি চাইলে বেশকিছুটা পথ হেটেই পাড়ি দিতে পারেন। রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
২| টেলিস্কোপ এবং বাইনোকুলারের মাধ্যমে বইক্কা বিলের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে এখানে আগত অতিথি পাখিদের পাশাপাশি এখানকার অন্যান্য প্রাণীদের পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এখানকার পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠতে খরচ হবে ১৫/- টাকা।
৩| বইক্কা বিলে নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন। এখানে ঘন্টা চুক্তিতে নৌকা ভ্রমন করতে পারেন খরচ সিচুয়েশন ও ডিমান্ডের উপর নির্ভর করবে।

উপযুক্ত সময়: শীতকাল বাইক্কা বিল ভ্রমনের উৎকৃষ্ট সময়। খুব সকালে সূর্যোদয়ের পরের দুই ঘণ্টা এবং সূর্যাস্তের সময় এখানে পাখিদের দেখার জন্য সবচেয়ে ভাল সময়। বিকালে পাখি দেখার পরিকল্পনা করলে সেভাবে রওনা দিবেন যাতে দুপুর ৩ টার মধ্যেই আপনি বিলে পৌঁছাতে পারেন তাতে পাখিদের দেখার জন্য ও ছবি তোলার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন। প্রাণী ও পাখিদের ছবি তোলার অভ্যাস থাকলে সাথে করে টেলিলেন্স আনতে ভুলবেন না। আপনি নৌকা ভাড়া করেও পাখিদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারেন।

নির্দেশনা: অনেক সিএনজি ড্রাইভার বাইক্কা বিল বলে একটি প্রাইভেট ফার্ম বা খামারবাড়ি টাইপের জায়গায় নিয়ে যেতে পারে তাই আগেই নিশ্চিত হয়ে নিবেন তিনি আসলেই চিনেন কিনা। বাইক্কা বিলে খাবার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই তাই খাবার ও পানি সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন।

উপসংহার : আপনার কষ্ট করে বয়ে নিয়ে যাওয়া জিনিস ফেলে আসবেন না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কে নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন আপনি ঘুরতে যাচ্ছেন, নোংরা করতে নয়।

Thanks to Original Author: Abu Nasar