সান্দাকফু, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত - আদার ব্যাপারী
সান্দাকফু
ভারত
সান্দাকফু -ফালুট ট্রেকে সিজন ভেদে তাপমাত্রা দিনের বেলা ১২-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের বেলা মাইনাস ৫ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। তাপমাত্রার সাথে প্রচন্ড বাতাস এই ট্রেকের আরেকটি চ্যালেঞ্জ। তাই জামা কাপড়ের দিক দিয়ে খুব ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত।
কখন যাবেন
ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ভিউ পাবার জন্যে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস সব থেকে ভালো সময়। এ সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা ও ভালো ভাবে দেখা যায়। তবে স্নোফল পেতে চাইলে জানুয়ারি থেকে মার্চ এর মাঝামাঝি বেস্ট সময় কিন্তু মনে রাখতে হবে এসময় প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। আর যদি রডোডেনড্রন দেখার জন্য প্ল্যান করে থাকেন তবে এপ্রিলের শুরু থেকে মে পর্যন্ত ভালো সময়।
বিঃদ্রঃ জুন ১৫- সেপ্টেম্বর ১৫ অফ থাকে বৃষ্টির জন্য।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং তথ্য
- সিঙ্গালিলা পার্কের এন্ট্রি টিকেট মানেভাঞ্জান থেকে নিতে হয় তবে ট্রেকে মেঘমা এর পরে আরেকটা চেকপোস্ট থেকেও নেয়া যায়। সিংগালিলা পার্কের টিকেট (Mandatory) – ২০০ রুপি
- ক্যামেরা থাকলে তার জন্য – ১০০ রুপি
- গাইডকে প্রতিদিন দিতে হবে – ৮০০ রুপি
- পাসপোর্টের ফটোকপি: ২-৫ কপি (ভিসার পাতাসহ)
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি: ৪ কপি সাথে রাখবেন। সাথে দুই কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি হলে আরো ভাল, তাতে মোবাইলের সিম নিতে সুবিধা হবে।
অত্যাবশ্যকীয় কিছু বিষয়
- ট্রেকিং এর সময় দাঁড়িয়ে রেস্ট নিন, মুখ দিয়ে নিশ্বাস না ছেড়ে নাক দিয়ে ছাড়ার চেষ্টা করুন, বসতে যাবেন না, পা ধরে যাবে।
- পানি যথাসম্ভব কম খাবেন।
- পাসপোর্ট কাছাকাছি রাখুন, পথে অনেক বার এন্ট্রি করতে হবে।
- জিন্স পরে ট্রেকিং না করার বেটার, দুইটা ট্রাউজার লেয়ারে পরে নিন।
প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম ও প্রস্তুতি
- ট্রেকিং বুট: ভালো গ্রিপের একটি ট্রেকিং বুট খুবই দরকারি। ৭ দিন পাথরের টেরেইনের মধ্যে এবং বস্তুত উঁচু-নিচু পাথরের রাস্তায় ট্রেক করতে হবে তাই পায়ের জুতাটি আরামদায়ক হওয়া বাধ্যতামূলক। পায়ের বুট গিরার উপর পর্যন্ত উঁচু হওয়া উত্তম। একদম নতুন বুট পড়ে ট্রেক করবেন না। ট্রেকের পূর্বে পাঁচ-ছয় দিন বুট পরে ঘুরবেন। সাথে ঊলের মোজা নিবেন।
- ঊইন্ড ব্রেকারঃ একটা প্যারাসুট জ্যাকেট (wind cheater) নিতে হবে যা ঊইন্ড ব্রেকার হিসেবে পরিচিত।
- ব্যাকপ্যাক: ভাল মানের একটি ব্যাকপ্যাক আরামদায়ক ট্রেকের জন্য গুরুত্বপূর্ন। ভালো ব্যাক সিস্টেম, কাঁধে আর কোমড়ে সমানভাবে ওজন নেয়, কাঁধে চাপ পড়ে না, এমন ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করা ভালো। এই ট্রেকের জন্য ৪০-৫০ লিটার ব্যাকপ্যাক হলেই যথেষ্ট।
- মাংকি ক্যাপ/বালাক্লাভা: বালাক্লাভা ওজনে হালকা, ফানেল আকারের এক টুকরো কাপড়। এটা দিয়েই মাংকি ক্যাপ, মাথা ঢাকা, কান ঢাকা, প্রয়োজনের সময় এটা দিয়েই গলা ঢাকা যায়। সান্দাকফু এবং সান্দাকফু থেকে ফালুট যাবার পথে প্রচন্ড বাতাসের তোপে এটা থাকা খুবই জরুরি। সাথে অবশ্যই মাফলার রাখবেন।
- হাতমোজাঃ মোটা হাতমোজা নিতে হবে।
- পলিব্যাগ: আপনার জিনিসপত্র পানি থেকে বাঁচাতে সব কিছু আলাদাভাবে পলিতে প্যাক করে নিবেন। সাথে করে অতিরিক্ত কয়েকটি জিপ লক/সাধারণ পলিথিন নিয়ে যাবেন। বিশেষ করে এপ্রিল-মে’র শেষের দিকে বৃষ্টির আশংকা সব সময়ই থাকে।
- হেড ল্যাম্প/টর্চঃ সাথে অতিরিক্ত ব্যাটারি। ঠাণ্ডায় ব্যাটারীর চার্জ অল্পতেই শেষ হয়ে যায় এই বিষয়টা সবসময় মাথায় রাখবেন। ট্রেক করতে গিয়ে রাত হয়ে গেলে অথবা রাতে টয়লেটে যেতে হলে এটার বেশ প্রয়োজন হতে পারে, তাই আকৃতিতে ছোট হলে ভালো।
- রোদ চশমা: বরফের মধ্যে সূর্যের আলো পড়ে কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের চোখে পড়ে। খালি চোখে তাই ট্রেক করা বিপদজনক। তুষার অন্ধত্ব হতে পারে। তাই ভালো দেখে একটি ‘পোলারাইজড’ রোদ চশমা নিয়ে যেতে হবে। জানুয়ারির দিকে সান্দাকফু গেলেই এটার প্রয়োজন হবে কারণ তখনি সেখানে বরফ পড়ে।
- ক্যামেরা, মেমরি কার্ড, পাওয়ার ব্যাংকঃ ট্রেইলের অধিকাংশ অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই।
- ট্রেকিং পোল/ওয়াকিং স্টিকঃ দুইটি পোল নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। নিদেনপক্ষে একটা। ট্রেকিং পোল ব্যবহার করলে শরীরের উপর চাপটা অনেক কম পড়ে।
- ট্রেক কিট: সুঁই, সুতা, সেফটি পিন, ১০০ ফিটের প্যারাকর্ড। কখন কি কাজে লেগে যায় বলা তো যায় না। এই জিনিসগুলো সব সময় কাজে লাগে।
- ট্রেইল মিক্স/চকলেট/লজেন্স: এমনিতে পুরো ট্রেইল জুড়েই কিছুদূর পর পর গ্রাম পড়বে যেখানে হালকা চা-নাস্তার ব্যবস্থা আছে। তারপরেও পথিমধ্যে মুখের স্বাদ পরিবর্তনের জন্য কিছু নিয়ে যেতে পারেন।
- পানির বোতল।
প্রয়োজনীয় ঔষধ
প্রাথমিক ফার্স্ট এইড কিটের ঔষধসমূহ (গ্যাসের ওষুধ, পেইন কিলার, মুভ, স্যাভলন) সাথে কিছু তুলা, গজ-ব্যান্ডেজ, পভিডন আয়োডিন, স্যাভলন, ব্যান্ড এইড। সেফটির জন্য ইনিহেলার নিয়ে যান। হাই অল্টিচ্যুড এ যাদের প্রবলেম আছে তারা ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ নিয়ে যাবেন অবশ্যই।
কিভাবে যাবেন
সান্দাকফু (Sandakphu) গাড়ি করেও যাওয়া যায়, ট্রেক করেও। যাত্রা শুরু হয় মানেভঞ্জন থেকে, দার্জিলিং থেকে ২৮ কিমি। মানেভঞ্জন থেকেই প্রয়োজনে নিতে হয় পোর্টার ও গাইড। মানেভঞ্জন থেকে কেউ চাইলে ১৯৫০ সালে তৈরি ল্যান্ড রোভারে চড়ে সান্দাকফু ও ফালুট অবধি যেতে পারেন। যদিও খাড়াই পাহাড়ি পথ হওয়ার করণে এই যাত্রা খুব একটা আরামদায়ক নয়।
আদতে সান্দাকফুর পরিচিতি ট্রেকিংয়ের স্বর্গরাজ্য হিসাবে। যাঁরা সবে ট্রেকিং শুরু করেছেন তাঁদের কাছে পায়ে হাঁটার আদর্শ গন্তব্য সান্দাকফু-ফালুট। মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু-ফালুট ট্রেকিং-যাত্রাকে ৪টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়ঃ
(১) মানেভঞ্জন (৭০৫৩ ফুট) থেকে মেঘমা (৮৫৩০ ফুট) – ৪ ঘণ্টার ট্রেকিং। পথ গিয়েছে ছবির মতো গ্রাম চিত্রে হয়ে। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে অনেক সময়ে চিত্রে থেকেও ট্রেক শুরু করা যায়।
(২) মেঘমা থেকে গৈরিবাস (৮৫৯৯ ফুট) – ট্রেকিংয়ের এই পথ গিয়েছে টংলু (১০০৭২ ফুট) ও টুমলিং (৯৫১৪ ফুট) হয়ে। অনেকে শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়িতে ধোতরে হয়ে টংলু বা টুমলিং এসে সেখান থেকে ট্রেকিং শুরু করেন। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের সীমানাটি এই পথের ধারেই। টুমলিং-এ জাতীয় উদ্যানের একটি চেকপোস্ট আছে।
(৩) গৈরিবাস থেকে সান্দাকফু – ৪ ঘণ্টার টানা খাড়াই পথ ধরে পৌঁছতে হয় সান্দাকফুতে। পথে পড়ে কালা পোখরি গ্রাম।
(৪) সান্দাকফু-ফালুট (১১৮১১ ফুট) – ট্রেকিং পথে সব চেয়ে আকর্ষণীয় অংশ এটি। ২১ কিমি পথে সব সময়ের সঙ্গী এভারেস্ট আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। এই পথে অবশ্য জল-খাবার পাওয়া যায় না। নিজেদের নিয়ে যেতে হয়। ইদানীং সবরকুম গ্রামে কিছু ব্যবস্থা হয়েছে। তবে তা অনিশ্চিত।
ফেরার সময় পুরনো পথে না ফিরে টানা নেমে চলে আসা যায় শ্রীখোলা নদীর ধারে শ্রীখোলায়। সেখান থেকে রিম্বিক। তার পর গাড়িতে দার্জিলিং।